প্রকাশিত: Thu, Jan 25, 2024 11:59 AM
আপডেট: Mon, Jun 23, 2025 1:43 PM

[১]শরীফার গল্পে হিজড়া আর ট্রান্সজেন্ডারকে এক করে দেখানোটাই ভুল: আবদুল্লা আল মামুন

শিমুল চৌধুরী ধ্রুব: [২] বিতর্ক চলছে সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের শরীফার গল্প নিয়ে।  এ প্রসঙ্গে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন সমাজ উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব  আবদুল্লা আল মামুন। বিষয়টি নিয়ে বুধবার আমাদের নতুন সময়ের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ হয় তাঁর। সেখানে তিনি গল্পটির উপস্থাপনাগত সীমাবদ্ধতা এবং আসিফ মাহতাবের প্রতিবাদের ভাষা নিয়ে কথা বলেছেন।

[৩] আবদুল্লা আল মামুন বলেন, এই তুমুল বিতর্কে কেউ আসলে মূল জায়গাটি নিয়ে কথা বলছে না। শরীফ থেকে শরীফার গল্পটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, গল্পের ন্যারেটিভ অনুযায়ী এটি একটি ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির গল্প। কিন্তু গল্পের শেষে ওই ব্যক্তিকে হিজড়া জনগোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত করে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং সেই  ২০১৩ সালে তৃতীয় লিঙ্গের সরকারি স্বীকৃতির প্রসঙ্গ টেনে আনা হয়েছে। এখানেই মূলত গল্পটিতে তালগোল পাকানো হয়েছে । কারণ হিজড়া আর ট্রান্সজেন্ডারতো এক নয়। যদিও হিজড়া ব্যক্তিদের মধ্যে অল্পকিছু মানুষ নিজেদের ট্রান্সজেন্ডার ভাবেন। 

[৪] তিনি বলেন, ২০১৪ সালে প্রকাশিত গেজেটে শুধুমাত্র হিজড়া জনগোষ্ঠীকেই লৈঙ্গিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। যেখানে ইংরেজিতেও (যরলৎধ) শব্দ ব্যবহার করতেও বলা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য এরপর পৃষ্ঠা ২, সারি   

(প্রথম পৃষ্ঠার পর)  কোনো লৈঙ্গিক স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। সেখানে এই গল্পে শরীফার বৈশিষ্ট্যগুলোতে ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে উপস্থাপন, আবার হিজড়া নামে পরিচয় করানোর ফলে অপরিচিত এই বিষয়ে শিশুদের কাছে ভুল বার্তা যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। যদি লেখক হিজড়া, ট্রান্সজেন্ডার বা অন্যান্য যারা রয়েছেন তাদের মানবাধিকার নিয়ে শিশুদের সচেতন করার চিন্তা নিয়ে এটি লিখে থাকেন তাহলে গল্পটি অনেক ইতিবাচক হওয়া উচিৎ ছিলো।

[৫] তিনি বলেন, অনেকে হিজড়াদেরকে ইংরেজিতে ট্রান্সজেন্ডার বলে দাবি করছেন। মূলত গ্লোবালি প্রচলিত যে সেক্সুয়াল ক্যাটাগরি রয়েছে এলজিবিটিআইকিউএ+, এর মধ্যে আই হচ্ছে ইন্টারসেক্স। যা বাংলায় আন্তঃলিঙ্গ বলা হয়। এই লিঙ্গটাই মূলত হিজড়া। 

[৬] এই সমাজ উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, গল্পে বলা হয়েছে, শরীফা তার লৈঙ্গিক চিন্তার কারণে পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারেনি, তার থাকতে হয়েছে গুরুমার সঙ্গে। আজকে যদি এই শিশুদের মধ্যে কেউ ট্রান্সজেন্ডার থাকে তাহলে সে কী ধরে নেবে! সে তো ধরে নেবে, আমার ভবিষৎ গন্তব্য গুরু মা। যিনি বা যারা গল্পটা লিখেছেন আমার মনে হয় তারা এসব ব্যাপারে ভাসা ভাসা জানেন, সুস্পষ্ট ধারণা তাদের নেই। কাজেই এ ধরণের  সংবেদনশীল বিষয় শ্রেণি উপযোগী করে শিশুদের কাছে উপস্থাপন করার আগে এই বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের দ্বারা তা নিরীক্ষা করা জরুরি। 

[৭] আসিফ মাহতাবের বই ছেঁড়ার ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে আনুষ্ঠানিক মঞ্চে এ ধরণের কার্যক্রম সমর্থন করি না। উনি নিয়মতান্ত্রিকভাবে উনার বিশ্লেষণ ও চাওয়া নিয়ে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে যোগাযোগ করে, প্রয়োজনে গণমাধ্যমে সাহায্যে উনার মতামত তুলে ধরে আরো গঠনমূলক দৃষ্টান্ত দেখাতে পারতেন। তবে যে কোন বিষয়ে প্রতিবাদ করার তার ব্যক্তি- স্বাধীনতাকে আমি সম্মান করি, আমরা কেউ তার সেই স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারি না। তবে কোনো পাবলিক অনুষ্ঠানে এমনটা কাম্য নয়। তার এই আচরণটা ভুল বার্তা দেয়। একজন শিক্ষককে থাকতে হয় রোল মডেলের ভূমিকায়। উনি এটা নিয়ে এনসিটিবি’র কাছে চিঠি দিতে পারতেন। তারপর কাজ না হলে সাংবাদিক সম্মেলন করতে পারতেন। প্রতিবাদটা গঠনমূলক হতে পারতো। 

[৮] উল্লেখ্য, নতুন কারিকুলামে সপ্তম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ে ‘শরীফার গল্প’ নামে একটি ছোট গল্প রয়েছে। যেখানে গল্পের মূল চরিত্র শরীফা জন্মগতভাবে পুরুষ হলেও নিজেকে নারী বলে দাবি করে এবং তার আগের নাম পরিবর্তন করে ‘শরীফা’ নামে পরিচিত হতে থাকে। পরবর্তী সময়ে শরীফা হিজড়া সম্প্রদায়ের একজন হিসেবে জীবনযাপন করতে থাকে।

[৯] পাঠ্যবইয়ের এই গল্প নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক। শরীফার গল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ট্রান্সজেন্ডার ও সমকামিতা শেখানো হচ্ছে দাবি তুলে বইয়ের সেই পৃষ্ঠাগুলো ছিঁড়ে ফেলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব। গত ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে জাতীয় শিক্ষক ফোরামের সেমিনারে এমন কাণ্ড ঘটান তিনি। 

[১০] আসিফ মাহতাবের বই ছেঁড়ার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হতেই এই আলোচনা-সমালোচনার শুরু। শিক্ষক, শিল্পী, সমাজকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও বিষয়টির নানা দিক নিয়ে নিজস্ব যুক্তি-তথ্য-উপাত্ত দিয়ে করছেন চুলচেরা বিশ্লেষণ। গল্পটির ভুল নিয়েও কথা বলছেন অনেকে। সম্পাদনা: সমর চক্রবর্তী, সালেহ্ বিপ্লব